আনোয়ারুল হক:
জ্বরের ঘোরে আমার ছয় বছরের মেয়ে শান্তা কিছুক্ষণ পরপর মা, মাগো, বাবা, বাবা… বলে কাতরাচ্ছে। মেয়ের সেই কাতর শব্দে আমার কলিজাটাতে ভিজে কাপড় চিপে জল ফেলার মতো মোচড় পড়ছে।
তিনদিন হতে চললো ওর জ্বর নামছে না কিছুতেই। গায়ে হাত দিলে গরম ছ্যাঁকা লাগার মতো হাত উঠিয়ে আনতে হয়। আর আমার ভিতরটা হিম ঠাণ্ডা হয়ে আসে।
আধা ঘণ্টা পরপর মাথায় ঠাণ্ডা পানি ঢালা, গা স্পঞ্জ করা, জলপট্টি দেয়া কিছুই তো বাদ রাখছি না। সেই সঙ্গে ওষুধ তো আছেই কিন্তু জ্বর নামার কোনো লক্ষণ নেই। ডাক্তার তিনদিনে দুইবার ঘরে এসে আশ্বাস দিয়ে গেছেন।
-ঠিক হয়ে যাবে। দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি সকাল বিকাল এসে দেখে যাব।
আমার মন মানে না। কাজের মেয়েটি বাথরুম আর ঘরে মাথায় পানি আনা নেয়া করতে করতে ক্লান্ত। আমিও অবসন্ন। মনে নানা কুচিন্তা আমাকে স্থির বসতে দিচ্ছে না।
একমনে জায়নামাজে সেজদায় গিয়ে আল্লাহকে বলি- হে আল্লাহ, তুমি আমার বুকের ধন, একমাত্র অবলম্বন সোনা মানিক মেয়েটিকে ভালো করে দাও। আমাকে উপায় বলে দাও, আমি কোথা থেকে মেয়ের বাবাকে এনে দেব।
তুমি তো তাকে আমাকে একলা করে ফেলে নিয়ে গেছ। তোমাকে সবাই দয়াল বলে। তুমি কি আমার কাতর অনুনয় শুনতে পাচ্ছো দয়াল? দয়া কর। দয়া কর।
মেয়ের খাটের পাশে নামাজ পড়ছিলাম। সালাম ফিরাতেই দরজায় কলিং বেলের শব্দ হল। এত রাতে কে এলো আবার। কাজের মেয়েটিকে ইশারা করতে সে গিয়ে জিজ্ঞেস করে এসে বলল,
খালাম্মা, কইলো ওনার নাম রায়হান। আর কিছু কয় নাই।
গরমের ছুটির জন্য বন্ধ, এখন আমার স্কুল বন্ধ চলছে। স্কুলে রায়হান আমার পছন্দের কলিগ।
দুই বছরের ওপর তার সঙ্গে আমার পরিচয়। আজ পর্যন্ত সে কোনদিন আমার বাসায় আসেনি।
ভাবছি, রাত দশটার ওপরে বাজে! এত রাতে! ওর কি আসার কথা ছিল!
দুই.
রায়হান সাঈদ। স্কুলে আমার পাশের টেবিলেই বসে। অংকের শিক্ষক। ছেলেমেয়েদের খুব পছন্দের স্যার সে। সুদর্শন, মুখচোরা লাজুক প্রকৃতির এই যুবক সবার সঙ্গে নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না। চুপচাপ প্রকৃতির, আমার পাশের টেবিলে বসতে হয় বলেই মনে হয় পড়ানোর ফাঁকে যা দুই চারটে কথা বলে তা আমার সঙ্গেই। মন খুলেও কথা বলে কখনও কখনও। তাও আমি প্রশ্রয় দিলে।
ওর সঙ্গে কথা বলে যতদূর জানি, এই শহরে নিজেদের ভিটে মাটিতে মা এবং এক ছেলের সংসার। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শহীদ হয়েছেন। ভিক্ষুকের মতো সরকারের কাছে হাত পাতেনি মা ও ছেলে।
গ্রামের বাড়িতে জায়গা জিরাত যা আছে তাতে কমতি হয়নি ওদের। শিক্ষকতা পেশার মান সম্মান নিয়ে সে খুব সচেতন। নীতিবান। স্কুলে পড়ানোর বাইরে রায়হান টিউশনিরও ঘোর বিরোধী। তার দরকারই বা কি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা আয়ে তার রুচি নেই।
স্কুলে গত দুই বছর ধরে তাকে দেখছি আমি।
মেয়েরা তো নাকি ছেলেদের মুখ দেখলেই অনেক কিছু বোঝে। হয়তো বা। কিন্তু আমি রায়হানকে বুঝবো কি, আমি আমাকেই বুঝি না। ওকে দেখলে কেন আমার ভালো লাগে, না দেখলে কেন আমার মন কেমন কেমন করে!
সেজন্য স্কুল বন্ধ থাকলে আমার দিন কাটে না, রাত কাটে না। খুললে আমার মনে খোলা হাওয়া লাগে। এই কথা আর কেউ জানে না। শুধু আমি জানি। আর জানি বলেই এখন আমার এই দুঃসময়ে রায়হান ঘরে এলো বলে ভালো লাগছে। আবার আমার বুক কাঁপছে। বাম দিকের বুকের নিচে ঢাকের শব্দ হচ্ছে!
তা হওয়ার অনেক কারণও আছে। আর যাই হোক, আমার কথাটা তো আমার অন্তত পঞ্চাশ ভাগ জানা উচিত। বাকি পঞ্চাশ ভাগ নাই বা জানা থাকল! বস্তুত এই শহরে খোঁজ নেয়ার মতো আমার আত্মীয় পরিজন কেউ নেই।
নদী পাড়ভাঙা একটি পরিবার। শুনেছি, শহরে এসেছি আমি বাবা-মায়ের সঙ্গে। ভাগ্যচক্রে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনের চাকরি পেয়ে বাবা কুমিল্লার মোগলটুলিতে জায়গা কিনে দোচালা মাথাগোঁজার ঠাই তুলে থিতু হয়ে যান। তাদের একমাত্র মেয়ে আমি।
কথার কথা না। সত্যি সত্যিই খুব সুন্দরী ছিলাম আমি। সুন্দরী মেয়েরা সমাজে সংসারে অনিরাপদ ভেবেই কি না এইচএসসি পাস করার পর আমার বিয়ে হয়ে গেল এই শহরেই ধনাঢ্য পরিবারের ব্যবসায়ী ছেলের সঙ্গে। কিন্তু সুখ সইল না।
শান্তার জন্মের এক বছরের মাথায় চান্দিনা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘরে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মারা গেল শান্তার বাবা। শোকের সময়ে অপয়া অপবাদ মাথায় নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হলাম বাবা-মায়ের কাছে।
অপবাদের সেই কষ্টেই নিজেকে আবার বিয়ের মোহ থেকে গুটিয়ে নিয়েছি। বাবা-মায়ের শত অনুরোধ সত্ত্বেও বিয়ে করতে না চাওয়ার একগুঁয়েমির জন্য হতাশায়, দুশ্চিন্তায় দুজনেই দুনিয়া থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে একে একে পালালেন। তখন শান্তার বয়স তিন।
তারপর সংসারে শেয়াল কুকুরের খাবার হব না কি এই আতঙ্কে ভেঙে না পড়ে মনের জোরে নিজেকে মেয়ে মানুষ না ভেবে মানুষ বলে ভাবতে শুরু করলাম। পাড়ার আশপাশে মা-বাবার পরিচিত অনাত্মীয় হৃদয়বান মানুষেরা আমাকে অভয় দিলেন। শক্তি পেলাম।
সেই সময় বাবার বন্ধু শুভানুধ্যায়ী এক চাচার সহায়তায় নজরুল মেমোরিয়াল একাডেমিতে শিক্ষকতার চাকরিটা পেয়ে অথৈ সাগরে যেন হালে পানি পেলাম।
এরপর মেয়েটিকে একটা ডে কেয়ার সেন্টারে রেখে স্কুল এবং পড়াশোনা করে এরই মধ্যে এমএটাও পাস করে নিয়েছি। এখন মা-মেয়ে একই স্কুলে। একই ক্যাম্পাসে এক প্রান্তে শিশু বিদ্যালয়ে শান্তা ক্লাস টুতে পড়ে আমি অন্য প্রান্তে হাইস্কুল সেকশনে পড়াই।
বলতে দ্বিধা নেই, স্কুলে মহিলা কলিগদের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক ছাড়া আমি তাদের এড়িয়ে চলি। কেননা ওরা শুধুই মহিলা। আর জনা পাঁচেক পুরুষ শিক্ষক যারা আছেন তারাও অনেকটা ওদের মতোই। ‘হংস মাঝে বক যথা’র মতো রায়হান এই সবের ভিতরে পুরোই ব্যতিক্রম।
নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে দরজাটা খুলতে একটু দেরি হয়ে গেল।
না কি আমি ইচ্ছে করেই দেরি করলাম! ঘরে ঢুকে খানিকটা বিব্রত রায়হান ক্ষমা চাইল এত রাতে আসার জন্য। মুখ নিচু যথারীতি। জিজ্ঞেস করল, শান্তা কেমন আছে এখন?
আমি ওর চোখ দেখার জন্যে তার দিকে তাকিয়ে আছি। বললাম, আগের মতোই। জ্বরটা নামছে না। যখনই কথা বলছে, আমাকে সে জিজ্ঞেস করছে,
মা আমার বাবা কি এসেছে? তুমি-না বলেছো, আসবে। আসবে মা? বলে আমাকে প্রশ্ন করছে।
গত তিনদিনের মানসিক ধকলের মধ্য দিয়ে এসে আজ একজন কাছের মানুষ পেয়ে মুখোমুখি সোফায় বসতে বসতে আমি ফ্যাসফ্যাসে গলায় আবার বললাম, রায়হান সাহেব, আমি আমার নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই জড়িয়ে গেছি।
আমি এখন কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। কেন যে মেয়েকে মিথ্যে বলে সত্যটা লুকাতে গেলাম? আপনি তো সবই জানেন, আমি এখন কী করে মেয়েটাকে বাঁচাই?
রায়হান আগের মতোই হাতের জমিনে চোখ রেখে মুখ নিচু করে বলল, কিচ্ছু ভাববেন না, আমি কাল বিকেলে মাকে নিয়ে আসব।
আমি মাথা নেড়ে বলি, আচ্ছা।
রায়হান চলে যাওয়ার পর আমি ভেবে কোনো কূল কিনারা পেলাম না, আমার কথার জবাবে তার মাকে নিয়ে আমার বাসায় আসার সম্পর্ক কি!
তিন.
নিজের ফাঁদে নিজে জড়িয়ে পড়ার বিপদে আমি পড়লাম মাস ছ’য়েক আগে।
শান্তা দ্বিতীয় শ্রেণীতে ওঠার পর একদিন বাসায় ফিরে এলে পর দেখি, অন্যদিনের মতো সে কথা বলছে না। খেতে বললে খেতে চাইছে না। বিকালে ঘরের উঠানে প্রতিবেশী ওর বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গেল না। মুখ ভার করে ঘরে বসে রইল।
আমি কয়েকবার তাকে কাছে ডাকলেও কাছে এলো তবে যা জিজ্ঞেস করি জবাব দেয় না, কোনো কথা বলে না। কেবল মুখ নিচু করে থাকে। এইটুকু মেয়ে, তার এমন আচরণ আমার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হল না।
রাতে ঘুমাবার আগে তাকে বুকের মধ্যে আলত চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলাম,
-কী হয়েছে মা, তোমার কেন মন খারাপ আমাকে বলবে না?
শান্তা তার ছোট্ট দুটি হাত দিয়ে তার মুখ ঢেকে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-আমার বাবা নেই কেন মা? আমার বাবা কেন আমাকে স্কুল থেকে নিতে আসে না? সবার বাবা আছে আমার কেন নেই? আমার বাবা কোথায়?
শান্তার প্রশ্ন শুনে আমার বুকের ভেতর ধক ধক করে জীবন নামক বস্তুটা লাফাতে লাগল। আর আবেগ সামলাতে না পেরে মনোকষ্টে ভুলটা আমি তখনই করলাম। বললাম, কে বলেছে নেই মা, তোমার বাবা আছে। তোমার বাবা বিদেশে আছে।
আসে না কেন?
আমি মেয়ের কোঁকড়ানো চুলের মাথাটা বুকে চেপে ধরে বললাম, আসবে মা আসবে। আমাকে বলেছে তোমার বাবা, শান্তাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। শিগগির আসছি আমি। অনেক খেলনা আনব ওর জন্য।
বলেছে? বাবাকে আমি চিঠি লিখব মা।
লিখো। লিখে আমাকে দিও। আমি তোমার বাবাকে তোমার চিঠি পাঠিয়ে দেব।
চিঠি লেখার সূচনা হয় শান্তার ক্লাস থেকে। পরদিন স্কুলে গিয়ে আমি শান্তার শ্রেণী শিক্ষক মরিয়ম ম্যাডামের কাছ থেকে খবর পেয়ে গিয়ে শুনলাম, তিনি ঐদিন ক্লাসে বাচ্চাদের বাবা বিষয়ে পাঁচটি বাক্য লেখান।
শান্তা লিখে দেয়া ওর মিসের কথাগুলো কিছুই লিখেনি। সে লিখেছে, ‘আমার বাবা নেই। আমার বাবা কেন আসে না? সবার বাবা আছে আমার বাবা নেই।’
শান্তার গুটিগুটি হাতের লেখা খাতাটা দেখে আমি আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এতগুলো বছর পর আমার বুকের ভেতরটা তখন তেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মাথাটা ভারী হয়ে আসে।
এরপর থেকে সেদিন রাতের কথামতো ছুটির দিনে শান্তা তার বাবাকে চিঠি লিখে আমাকে দেয়। আমি সেই চিঠিগুলো পাঠাব, তাকে বলেছি।
স্কুল থেকে ঘরে ফিরে শান্তা আমাকে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে, মা চিঠি পাঠিয়েছ? বাবা জবাব দিয়েছে? চিঠি এসেছে?
আমি আশ্বাস দিই, আসবে মা আসবে।
কতদিন এভাবে মিথ্যে আশ্বাস দেয়া যায় মেয়েকে? শুরু করলাম নতুন খেলা।
রাতে মেয়ে ঘুমিয়ে গেলে আমি মেয়ের বাবার নামে জবাব লিখি।
পরদিন স্কুল থেকে এলে মেয়েকে বললাম, তোমার বাবার চিঠি এসেছে শান্তা।
শুনে মেয়ের সে কী খুশি। আমি শান্তাকে চিঠি পড়ে শোনাই আর চোখের জলে ভাসি।
শান্তা একদিন লেখে, বাবা, তুমি আসো না কেন? তুমি কবে আসবে বল। তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাস না বাবা? তুমি আসো বাবা।
এই একই কথা শান্তার চিঠিতে থাকে প্রতি সপ্তাহে। শেষমেশ একদিন লিখলাম, শান্তা মা, আমি আসছি। তুমি ভালো থেকো। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি শান্তা।
ইতি। তোমার বাবা।
সেই চিঠি বুকে নিয়ে মেয়ের আহার নিদ্রা ঘুম সব উধাও। অনিয়মের চূড়ান্ত করতে লাগল সে তার বাবার অপেক্ষায়। প্রতিটি দিন যায় আর আমার কাছে কেবল জানতে চায়, বাবা আসে না কেন মা? কবে আসবে?
মিথ্যের ডালপালা দিনে দিনে যত বাড়ে মেয়ের চোখ তত তীব্র হয়ে আমার মুখের ওপর। কী যেন খুঁজে বেড়ায় সে। কোনো তল না পেয়ে শান্তা এক সময় নেতিয়ে পড়ে। এখন তো বেহুশ।
চার.
সারারাত জায়নামাজে মেয়ের জীবন বাঁচাতে আল্লাহর কাছে কাঁদলাম। শুধু একটা কথাই বারবার বলতে পেরেছি, হে মাবুদ, আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে দাও। আমি এখন কী করব উপায় বলে দাও। শান্তাকে বাঁচিয়ে দাও।’ এভাবে সেই রাতটা আমার ভোর হয়েছে।
ফজরের নামাজ শেষে শান্তাকে সূরা ইয়াসীন পড়ে ফুঁ দিয়ে কপালে হাত রেখে মনে হল, জ্বরটা যেন একটু কমে এসেছে। সকাল আটটার দিকে সে চোখ খুলে বলল,
খুব ক্ষিদে পেয়েছে মা। আমাকে খেতে দাও।
আমি তাড়াতাড়ি দুধ রুটি নরম করে ওকে চামচ দিয়ে খাওয়ালাম। যতটুকু দিলাম সবটাই খেয়ে আমাকে কাছে ডেকে মেয়ে বলল,
মা আমি স্বপ্নে দেখেছি। আজ বাবা আসবে।
এমন কথা শুনে আমার অজানা আশঙ্কায় বুক কাঁপে। আমি শান্তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদি। মেয়ে আমার হাসে। অমলিন শুভ্রতায়।
পাঁচ.
বিকল সন্ধ্যার দিকে গড়াবার আগে আমার দরজার কলিং বেল বাজল।
আমিই খুললাম।
মেয়ে দরজা খোলার আওয়াজে বিছানা থেকেই আমাকে বলে,
মা দরজা খোলো। দেখো, বাবা এসেছে মনে হয়।
শান্তার স্বপ্নের কথা শোনার পর থেকে আমার বুকের কাঁপুনি এখনও থামেনি। পা দুটো থরথর করেছে দিনমান।
কাঁপা হাতে দরজা খুলতেই সৌম্য সুন্দর যিনি প্রথমে ঘরে ঢুকলেন বুঝতে কষ্ট হল না, তিনি রায়হানের মা। তার পেছনে কুণ্ঠিত পায়ে এক হাতে ফুলের তোড়া অন্য হাতে খেলনার বাক্স নিয়ে রায়হান। ওর মা হাসিমুখে এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
তুমি কি আমার ছেলের বউ হবে মা?
আমি রায়হানকে খুঁজছিলাম আশপাশে, ওর চোখ দুটো দেখব বলে। নেই।
ঘরের ভেতর থেকে শান্তার ‘বাবা, তুমি এসেছো’- বলে উল্লাসের আনন্দধ্বনি শুনতে পেলাম।
মনে আছে আমার, শুনতে শুনতে সেই সময় রায়হানের মা এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে না ধরলে জ্ঞান হারানো লতিয়ে পড়া আমি মাটিতে পড়ে যেতাম।
দুই হাত বাড়িয়ে তিনি পরম আদরে আমাকে তার বুকে তুলে নিলেন। শান্তাকে যেমন নিয়েছেন ওর বাবা রায়হান।